ইচিং বিচিং পিচিংঃ সিনেমা শুরুর সিনেমা
- saptarshi ray
- Aug 5, 2021
- 2 min read
২০১৪ তে আমাদের EYENOX দিয়ে শুরু হল অনট্র্যাকের স্টুডেন্টদের ফিল্ম দেখানো, ফিল্ম নিয়ে কুইজ, আলোচনা। প্রথম বছর আমরা আমাদের কিছু স্বাস্থ্য বিষয়ক ফিল্ম আর বাইরে থেকে প্রথিতযশা পরিচালকদের ইস্যুভিত্তিক ছবি দেখলাম।

২০১৫ তে শুরু হল ব্যাড অ্যান্ড বিউটিফুল ওয়ার্ল্ড ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের আগাম তোড়জোড়। যদিও অনট্র্যাক স্টুডেন্ট দের নিয়মিত সিনেমা দেখানো ও তা নিয়ে আলোচনা সিলেবাসের মধ্যেই ছিলো । আমরা অনেকদিন আগেই Akira Kurosawa - Rashomon থেকে শুরু করে Adoor Gopalakrishnan এর Elippathayam (Translation: The Rat Trap) দেখে ফেলেছি। আমরা একটা স্টোরি-হাব তৈরি করলাম। জমে উঠতে লাগলো গল্প। সেই গল্প নিয়ে শুরু হল স্ক্রিপ্টের ওয়ার্কশপ। স্টোরি বোর্ড তৈরি করে - বাজেট কষে - আমাদের ইয়ুথ ডাইরেক্টার রা নিজেদের প্রস্তুত করতো পিচিং এর জন্য। মনে আছে ২০১৫ থেকে অনেকের ছবি ছাঁটাই করে বাছা হল ৮টি প্রজেক্টকে। টানটান উত্তেজনায় শেষ হল পিচিং সেশান। (উপরের ছবিটি সেই পিচিং এরই )। ২০১৫ এর উল্লেখযোগ্য সিনেমার মধ্যে, বুলিং নিয়ে সুজিতের ছাপ্পা, জেন্ডার ইনইক্যুয়ালিটি নিয়ে সালিমের আস্তে লেডিস, অ্যালকোহলিসিম নিয়ে মনিষের আহসাস, ভারবাল অ্যাবাউস নিয়ে শিখার গালি আর ডোমেস্টিক ভায়োলেন্স নিয়ে মোনালিসার শুরুর শুরু মিডিয়াতে বেশ সাড়া ফেলেছিলো।







২০১৬ তে যখন গল্প লেখার ওয়ার্কশপ শুরু হবে হবে করছে, তখন একদিন হঠাৎ করে সেশানের মাঝখানে রূপা আমাকে বলে বসলো যে সে আমার সঙ্গে আলাদা করে কথা বলতে চায়। রূপা, অনেকটা আমাদের এক প্রাক্তন নেতার মতো যার হাসি খুব কম লোক দেখেছে, সেরকম রূপার কথা খুব কম লোক তখন পর্যন্ত শুনেছিলো। আমাদের অনট্র্যাক সেশানও রূপা কে মুখ খোলাতে তখনও ততটা সক্ষম হয়নি । বসলাম, ওমা কথা বলবে কি, মেয়ে তো কেঁদে ভাসায়। তারপর অনেকক্ষণ বাদে বলল যে সে এবার সিনেমা করবে আর বলবে নিজের জীবনের একটা ভয়াবহ অধ্যায়ের কথা যা আজ পর্যন্ত সে কাউকে বলে উঠতে পারেনি। শুনলাম এক প্রাইভেট টিউটার কি ভাবে দিনের পর দিন তাঁকে অ্যাবাউস করার চেষ্টা চালিয়ে গেছে - আর যেহেতু আশেপাশে কোনও টিউটার আর নিউ সিলেবাস পড়াতেন না, পড়াশুনো চালিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য রূপা কে তাঁর এই নোংরামি সহ্য করতে হয়েছিলো - তারপর একদিন সহ্যের বাঁধ ভেঙ্গে রূপা ডিসিশান নেয় সে পাশ ফেল যা করুক নিজেই পড়ে নেবে। তবে এই নোংরা লোকটিকে কিছু না করতে পারার মানসিক কষ্ট ও বয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছিলো - সিনেমা রূপাকে এই যন্ত্রণা থেকে মুক্তি দিলো।

২০১৬ তে এই ফিল্ম যেদিন সত্যজিৎ রায় ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশান ইন্সটিটিউটে হলভর্তি লোকের সামনে দেখানো হল এবং রূপা স্টেজে ওঠা মাত্র বহু মেয়ে দাঁড়িয়ে বলে উঠলো তাঁরাও এই নোংরামির শিকার - প্রয়াসম শুরু করলো পাড়ায় পাড়ায় সেফটি নেট। পিচিং হয়ে উঠলো সবার না-বলা কথার প্ল্যাটফর্ম । আর সিনেমা হাতিয়ার । রূপার ট্রেচার যেখানেই দেখানো হয়েছে ছেলে মেয়েরা সহজেই বলতে পেরেছে তাঁদের অসহায়তার কথা। রূপার ট্রেচার সেবারের বেস্ট ফিল্মের শিরোপাও পায়। নীচের ছবিটি রূপার প্রথম পিচিং [ডানদিক থেকে বসে প্রথম মেয়েটি রূপা]

রূপা -র মতো বহু ছেলে মেয়ে বুকের মধ্যে চেপে রেখেছে ভয় লজ্জা রাগ ঘৃণা - আমাদের তাঁদের কাছে একটাই অনুরোধ - প্রয়াসম ভিস্যুয়াল বেসিকস এর প্ল্যাটফর্ম টি একবার use করে দেখতে পারো। যদি রূপা, সালিম, সুজিত, মনিষ, প্রিয়া, রাহুল পেরে থাকে তোমরাও পারবে। আজ রূপা সামলাচ্ছে দুয়োরানীর সংসার । যাচ্ছে ট্রেনিং দিতে কিনিয়া। ভাগ্যিস সেদিন পিচিং এ যেতে রাজী হয়েছিলো, না নিলে আজও হয়তো রেগে থাকতে হতো নিজের অসহায়তার ওপর।

আজকের confident ROOPA... প্রয়াসম ভিস্যুয়াল বেসিকস অপেক্ষায় থাকলো তোমাদের।
Comments