সিনেমা যখন আয়না , My Happy Family
- amlan ganguly
- Aug 8, 2021
- 2 min read
Updated: Jun 18, 2022

সামনে ২৫ বছর - প্রয়াসম পরিবারের জন্য প্রচুর নতুন নতুন কাজের আকাজের ভাবনা নিয়ে বসেছি । আর প্রতিদিন নিজের ২৫ বছরের কাজের মূল্যায়ণ - বিশেষ করে আমার এই পরিবারের সকলের সঙ্গে আমার সম্পর্কের ওঠাপড়া - ভাঙ্গাগড়া নিয়ে চিন্তা ভাবনা করছি। কখনও নিজেকে ফুলমার্কস দিচ্ছি কখনও ডাহা ফেল। সেদিন মাঝরাতে কাজ শেষ করে উঠতে যাবো - হঠাৎ কি মনে হল ভাবলাম একটা সিনেমা দেখি। নেটফ্লিক্সে গিয়ে খোঁজাখুঁজি করতে করতে দেখলাম My Happy Family... জর্জিয়া দেশের ছবি। অভিনয় করেছেন লা সুগ্লিয়াভিলি, মেরাব নিনিডজা, ব্রেটা কেপাভা ও আরও অনেকে।

সিনেমার গল্পটা অনেকটা এইরকম - পঞ্চাশ বছরের মানানা যখন পরিবার ছেড়ে দূরে থাকার সিদ্ধান্ত নেয়, আত্মীয়-পরিজনেদের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে। মানানার বৃদ্ধা মা, যিনি সকাল থেকে মেয়েকে খিটখিট করতে শুরু করেন এবং নিত্যনতুন রান্নার ফরমাশ করেন – তিনি ছোট ছেলেকে ডেকে পাঠাতে চাইলেন। মানানার স্বামী, তারই জন্মদিন উপলক্ষে, কাজের দিন অনেক বন্ধু-আত্মীয়দের ডিনারে ডেকে বসে এবং তাকে দিয়েই রান্না করায়, সে ভাবতেও পারে না – কী কারণে স্ত্রী বাড়ি ছাড়ছে। পুত্র-কন্যা-পুত্রবধূ পায়ের ওপর পা তুলে হুকুম করে অভ্যস্থ – শিক্ষয়িত্রী মা, হাড়ভাঙা খাটনির পর সে সব তামিল করে – তারাও বুঝতে পারে না কিছুই। এমন সুখের সংসার ছেড়ে, মধ্য বয়েসী নারী বাড়ি ছেড়ে যাচ্ছে কেন তাহলে?

পুরো পরিবার দফায় দফায় হাজির হয় মানানার ঘরে। পারে কি তারা মানানা কে মানাতে? কেন জানিনা মানানা-র সঙ্গে নিজেকে হঠাৎ মেলাতে ইচ্ছে করলো । এই ক'বছরে আমি যে আস্তে আস্তে বহু সম্পর্ক থেকে বার হয়ে আসতে চেয়েছি, তা কি আদৌ সম্ভব? এতদিনের তিল তিল করে গড়ে তোলা আমার এই সম্পর্ক গুলো আমি কি ছেড়ে দিতে পারবো - মানানা-র মতো মনের জোর আমার হবে তো? ২০০৬ সালে আমি যখন অশোকা ফেলো হিসেবে ইন্ডাক্টেড হই - তখন অশোকা থেকে বলা হয়েছিলো যে An Entrepreneur must be dispassionately passionate...২৫ বছর ধরে তাই চেষ্টা করছি।

ঠান্ডা মাথায় সম্পর্ককে disown করার সাহস বেশ কঠিন। আমাদের সব্বারই যে বড় "সুখের সংসার" ! কিন্তু হয়তো পারা যায়। একটু চেষ্টা করলেই পারা যায়। অ্যামেরিকায় থাকা এক বন্ধুকে অতরাত্রে (ওঁর সন্ধ্যে হবে হবে) ফোন করলাম - কথা গাল গল্পের মধ্যে এক ভীষণ সত্যি সামনে এসে দাঁড়ালো - যে সম্পর্কগুলোকে আমি সরিয়ে দিয়েছি তাঁদের থেকে আসা আঘাতও আজ আর আমার লাগবে না । লাগছেও না। হঠাৎ ভীষণভাবে নিজেকে স্বাধীন মনে হলো - এটা যেন আমার প্রকৃত মুক্তি। সম্পর্ক যখন দাবি-দাওয়ার শেকলে হাত-পা বেঁধে রাখে ও বাধ্যতামূলক উদযাপনে সামিল করতে থাকে – তখন ধীরে ধীরে স্বতঃস্বফূর্ততা হারিয়ে সেই সম্পর্ক অন্ধকূপে ঢুকে পরে । শ্বাস রোধ হয়ে আসে। অধিকাংশ মানুষ সেই অন্ধকারে মুখ গুঁজে দিন যাপন করে। আমাকে তার থেকে নিজেকে বাইরে বার করে আনতেই হবে। ফোন রেখে পরেরদিন নিজের কিউবিক্যাল কিভাবে সাজাবো তার প্ল্যান করলাম। প্রচুর ময়লা জমেছে - আমি তাতেই অভ্যস্ত হয়ে পড়ছিলাম - সরাতে হবে। ভারী হালকা লাগলো অনেকদিন বাদে তাই আর না ঘুমিয়ে বৃষ্টির আওয়াজ শুনতে লাগলাম প্রাণ ভরে।

মানানার মতো সাহস হয় আর ক’জনের! আগের বাড়িতে আকাশ দেখা যেত না – রাতে, আঁধারের বারান্দায় সে কেবল ক্লান্ত মুখ লুকোতে দাঁড়াত – এখন তার ঘরের ব্যালকনিতে ঝড়ের মতো বাতাস বয়ে যায় – সেই শব্দ শুনতে শুনতে শান্তির ঘুম আসে মানানার – ‘অনেকদিন বাদে, অনেকদিন পর’।
Comments